সালবিউটামল + ইপ্রাট্রপিয়াম

নির্দেশনা

ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমােনারী ডিজিজ (COPD) এর রােগী যাদের সবসময় ব্রঙ্কোস্পাজম এর লক্ষণ বিদ্যমান থাকে এবং যাদের দ্বিতীয় একটি ব্রঙ্কোডাইলেটর দরকার, তাদের জন্য নিয়মিত এরােসল ব্রঙ্কোডাইলেটর হিসেবে ইহা নির্দেশিত।

ফার্মাকোলজি

এই ইনহেলেশন এরােসল হলাে স্যালবিউটামল (সালফেট হিসেবে) এবং ইপ্রাট্রোপিয়াম ব্রোমাইড -এর কম্বিনেশন। এটি হাইড্রোফ্লুরােএলকেন (এইচএফএ) ভিত্তিক একটি পরিবেশ বান্ধব ইনহেলার। কারণ এতে প্রপেল্যান্ট হিসেবে ক্লোরােফ্লুরাে কার্বন (সিএফসি) নেই যা ওজোন স্তর ক্ষয়ের অন্যতম কারণ।

স্যালবিউটামল স্বল্পকাৰ্যমেয়াদী বিটা২-এ্যাড্রিনার্জিক ব্রঙ্কোডাইলেটর এবং ইপ্রাট্রোপিয়াম ব্রোমাইড একটি এন্টিকলিনার্জিক ব্রঙ্কোডাইলেটর। যখন এ দুটোর কম্বিনেশন ব্যবহার করা হয়, ইপ্রাট্রোপিয়াম ব্রোমাইড, ব্রঙ্কিয়াল মসৃণ মাসলের মাসকারিনিক রিসেপ্টরের এসিটাইলকোলিন এর ইন্টার‍্যাকশনে আন্তঃকোষীয় সাইক্লিক গুয়ানােসিনের আধিক্যের এ প্রক্রিয়াকে প্রতিরােধ করে। ক্রনিক অবসট্রাকটিভ পালমােনারী ডিজিজ (COPD) প্রতিরােধের ক্ষেত্রে এন্টিকোলিনার্জিক (প্যারা সিমপ্যাথােলাইটিক) এবং সিমপ্যাথােমিমেটিক, এই দুই ভিন্ন পন্থায় এই ইনহেলেশন এরােসলের কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হয়। ইহাতে একই সাথে এন্টিকোলিনার্জিক (ইপ্রাট্রোপিয়াম ব্রোমাইড) এবং বিটা২ সিমপ্যাথােমিমেটিক (স্যালবিউটামল) এর সম্মেলন ঘটানাে হয়েছে যা এর যে কোন একটি উপাদানের নির্ধারিত মাত্রার কার্যকারিতার চেয়েও অধিক ব্রঙ্কোডাইলেশন ঘটিয়ে রােগীর কল্যান সাধন করে।

ঔষধের মাত্রা

প্রাপ্ত বয়স্ক ও বয়ােবৃদ্ধ:  দুইটি করে পাফ দৈনিক ৪ বার (রােগীর প্রয়ােজনে অতিরিক্ত পাফ নেয়া যেতে পারে। তবে ২৪ ঘন্টায় মােট ১২ টি পাফ এর বেশী নেয়া উচিৎ নয়) অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণযােগ্য।
* চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ঔষধ সেবন করুন

সেবনবিধি

ইনহেলার ব্যবহার সহজ মনে হলেও অনেক রােগী সঠিকভাবে এর ব্যবহার জানে না। রােগী সঠিকভাবে ইনহেলার ব্যবহার না করলে তার ফুসফুসে পর্যাপ্ত মাত্রায় ঔষধ প্রবেশ করে না। ইনহেলারের নিয়মিত ও সঠিক ব্যবহার এ্যাজমা আক্রমন রােধ করে ও এর তীব্রতা কমায়।

নিম্নলিখিত নিয়মাবলী পালন করে আপনি আশানুরূপ ফল পেতে পারেন যা অ্যাজমা এসােসিয়েশন কর্তৃক প্রকাশিত "National Asthma Guidelines for Medical Practitioners" অনুসরণে:
  1. প্রথমে ঢাকনা খুলে নিন
  2. প্রতিবার ব্যাবহারের পুর্বে ইনহেলার ভালোভাবে ঝকিয়ে নিন।
  3.  ইনয়েলারটি যদি নতুন হয় অথবা এক সপ্তাহ বা এর অধিক বিরতিতে ব্যবহৃত হয় তাহলে এই পরীক্ষামূলক ব্যবহার প্রয়োজন; অর্থাৎ একটি মাত্রা বাতাসে নিঃসৃত করে দেখতে হবে।
  4. সুবিধাজনকভাবে যতটুকু সম্ভব শ্বাস ত্যাগ করুন এবং ইনহেলালকে সোজাভাবে ধরুন।
  5. শ্বাস বন্ধ অবস্থায় ইনহেলারের মুখ আপনার মুখের ভিতর এমনভাবে পুরে নিন যেন আপনার মুখ ও ইনহেলারের মধ্যে কোন ফাঁক না থাকে।
  6. ক্যানিস্টারে চাপ দিন এবং সাথে সাথে মুখ দিয়ে অবিরাম কিন্তু ধীর গতিতে পূর্ণ মাত্রায় শ্বাস নিন।
  7. আপনার মুখ থেকে ইনহেলার বের করে নিন। ইনহেলার করার ১০ সেকেন্ড বা যতক্ষন সম্ভাব শ্বাস বন্ধ রাখুন এবং পরে ধীরে ধীরে শ্বাস ত্যাগ করুন।
  8. ডাক্তার যদি প্রতিবার একাধিক মাত্রা গ্রহনের পরামর্শ দেশ, তবে দ্বিতীয় চাপটির জন্য একসাথে ১ মিনিট অপেক্ষা করুন। অতঃপর ইনহেলার ভালোভাবে ঝাকিতে নিন এবং ৪ নং থেকে ৭ নং পর্যন্ত নিয়মাবলীর পুনরাবৃত্রি করুন।
  9. ব্যবহারের পর ক্যাপ দিয়ে এ্যাকচুয়েটরের মুখ বন্ধ রাখুন। ইনহেলার ব্যবহারের পর মুখে সাধারণ পানি দিয়ে কুলি করুন।
  10. আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পুরো পদ্ধতিটা মাঝে মাঝে অনুশীলন করুন। যদি কোন সাহা ধোঁয়া দেখতে পান তবে বুঝবেন যে ঠোঁট দিয়ে এ্যাকচুয়েটরের মুখ ভালোভাবে ঢোকে নাই অথবা আপনি চাপের সাথে শ্বাস নিচ্ছেন না। এটা পদ্ধতিগত ভুল। এমন হলে ৪ নং পদ্ধতিটি আবার চেষ্টা করুন।
ইনহেলার পরিষ্কার করার নিয়মাবলী: সপ্তাহে অন্তত একবার আপনার ইনহেলার পরিষ্কার করুন। ক্যানিস্টারটি এ্যাকচুয়েটর থেকে আলাদা করুন এবং এ্যাকচুয়েটর ও কাভার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। কিন্তু ধাতব ক্যানিস্টারটিকে কখনই পানিতে ভিজাবেন না। অতঃপর এ্যাকচুয়েটর ও কাভার শুকিয়ে নিন এবং ধাতব ক্যানিস্টারটি সাবধানে এ্যাকচুয়েটরের অভ্যন্তরে ঢুকিয়ে নিন। মাউথপিস কাভারটি সঠিকভাবে স্থাপন করুন।
* চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ঔষধ সেবন করুন

ঔষধের মিথষ্ক্রিয়া

এই ইনহেলেশন এরােসল COPD প্রতিরােধে অন্যান্য ঔষধ যেমন সিমপ্যাথােমিমেটিক ব্রঙ্কোডাইলেটর, মিথাইলজেনথিন এবং স্টেরয়েডের সাথে ব্যবহার করা হয়। এই ইনহেলেশন এরােসল এবং অন্যান্য ঔষধ ব্যবহার করে COPD চিকিৎসার ক্ষেত্রে ড্রাগ ইন্টারঅ্যাকশনের নির্দিষ্ট কোন গবেষণা হয়নি। ইপ্রাট্রোপিয়াম ব্রোমাইড অন্যান্য এন্টিকলিনার্জিক এবং সিমপ্যাথােমিমেটিক এজেন্ট গুলাের সাথে একযােগে ব্যবহারের সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, কারণ ইহা হৃদরােগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ইহার মত যে সব ড্রাগে বিটা-২-এগােনিষ্ট আছে সেগুলাে নন-পটাশিয়াম স্পেয়ারিং ডাই-ইউরেটিকস্, মনােএমাইন অক্সিডেজ ইনহিবিটরস্ অথবা ট্রাইসাইক্লিক এন্টিডিপ্রেসেন্ট গুলাের সাথে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত।

প্রতিনির্দেশনা

যে সকল রােগীদের সয়া লেসিথিন বা এই প্রকার খাদ্য (সয়াবিন এবং বাদাম) এর প্রতি অতিসংবেদনশীল তাদের ক্ষেত্রে ইহা প্রতিনির্দেশিত। ইহার যে কোন উপাদান বা এ্যাট্রোপিন অথবা এর যে কোন উদ্ভুত যৌগ এর প্রতি অতিসংবেদনশীল রােগীদের জন্যও প্রতিনির্দেশিত।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

স্যালবিউটামলের উপস্থিতির জন্য সামান্য কাঁপুনি এবং মাথা ব্যথা পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু নিয়মিত ব্যবহারে তা প্রশমিত হয়ে যায়। মাসল সংকোচন, অতিসংবেদনশীল ক্রিয়া যেমন এনজিওএডেমা, আর্টিকেরিয়া, ব্রঙ্কোস্পাজম, হাইপােটেনশন কদাচিৎ পরিলক্ষিত হয়।

ইপ্রাট্রোপিয়াম ব্রোমাইডের উপস্থিতির জন্য মাথা ব্যথা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, বুকব্যথা, বমি বমি ভাব, ডিজনিয়া, কফ, ফেরিঞ্জাইটিস, সাইনুসাইটিস কদাচিৎ লক্ষ্য করা যায়।

গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে

ইপ্রাট্রোপিয়াম ব্রোমাইড: গর্ভাবস্থা ক্যাটাগরী বি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে ইপ্রাট্রোপিয়াম গর্ভাবস্থায় গ্রহণে ক্ষতিকর নয়।

স্যালবিউটামল: গর্ভাবস্থা ক্যাটাগরী সি। প্রাণীদের ক্ষেত্রে স্যালবিউটামলের টেরাটোজেনিক ক্রিয়া লক্ষিত হয়েছে।

তারপরও গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ইনহেলার (স্যালবিউটামল এবং ইপ্রাট্রোপিয়াম ব্রোমাইড কম্বিনেশন) এর পর্যাপ্ত ও সুনির্ধারিত গবেষণা নেই । গর্ভাবস্থায় ঔষধের প্রয়ােগ তখনই বিবেচনা করা উচিত যখন তার সম্ভাব্য উপকারিতা ভ্রুনের উপর সম্ভাব্য ঝুঁকির চেয়েও অধিক। ইপ্রাট্রোপিয়াম ব্রোমাইড এবং স্যালবিউটামল কম্বিনেশনের কোন অংশ স্তন্যদুগ্ধে বহিঃক্ষরণ হয় কিনা তার কোন সুপ্রতিষ্ঠিত গবেষনা নেই। যেহেতু অনেক ঔষধই স্তন্যদুগ্ধে বহিঃক্ষরণ হয় সেহেতু ইহা ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুগ্ধদানকারী মায়েদের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

সতর্কতা

এই ইনহেলেশন এরােসলে আছে ইপ্রাট্রোপিয়াম ব্রোমাইড যা ন্যারাে অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা, প্রােস্টেটিক হাইপারট্রপি অথবা ব্লাডার-নেক অবস্ট্রাকশনের রােগীদের গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ইহাতে বিদ্যমান সিমপ্যাথােমিমেটিক অ্যামাইন যেমন স্যালবিউটামল সালফেট কনভালসিভ ডিসঅর্ডার, হাইপারথাইরয়েডিজম, ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস এবং সিমপ্যাথােমিমেটিক অ্যামাইনের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়াশীল রােগীদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

মাত্রাধিক্যতা

মাত্রাধিক্যের প্রভাব প্রাথমিকভাবে স্যালবিউটামল সালফেটের উপস্থিতির সাথে সম্পর্কিত। স্যালবিউটামলের মাত্রাধিক্যতায় এনজাইনাল পেইন, হাইপারটেনশন, হাইপােক্যালিমিয়া এবং ট্যাকিকার্ডিয়া পরিলক্ষিত হতে পারে।

থেরাপিউটিক ক্লাস

Combined bronchodilators

সংরক্ষণ

চাপযুক্ত ক্যানিস্টার আপাত দৃষ্টিতে খালি মনে হলেও ছিদ্র করা, ভাঙ্গা অথবা পােড়ানাে যাবে না। সরাসরি সূর্যালােক বা তাপ থেকে দূরে রাখুন। ঠাণ্ডা ও শুষ্ক স্থানে রাখুন। সকল ঔষধ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। চোখের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখুন।